সম্প্রীতি কোভিড-১৯ এর এই বৈশ্বিক মহামারি এর কারনে আমরা লকডাউনের এক বিচিত্র অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হচ্ছি। আমাদের মধ্যে অনেকেই এই অভিজ্ঞতাকে ‘নিউ নরমাল লাইফ’ বলে থাকি। আমরা প্রায় দের বছর ধরে এই ধরণের একটি অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হচ্ছি। এই ধরণের পরিস্থিতির মদ্ধেই আমাদের গত বছরের ঈদটি কেটেছে। আজকে আমরা আমাদের এই ধরণের ঈদ এর অভিজ্ঞতার কথা আপনাদের সামনে তুলে ধরব। আমাদের মধ্যে অনেকেই ঈদের সময় আমাদের যারযার গ্রামের বাড়িতে যাই অথবা অন্যান্য আত্মীয়-স্বজনের কাছে বেড়াতে যাই। কিন্তু গতবার কোভিড-১৯ এর এই মহামারির কারনে আমরা কেউই আমাদের বাসস্থান ত্যাগ করতে পারিনি। তাই আমরা অনেকেই আমাদের আনন্দ আমাদের কাছের আত্মীয়-স্বজনের সাথে ভাগ করতে পারিনি। তবে ঢাকায় যাদের আত্মীয়-স্বজনেরা আছে তারা হয়তো দুধের স্বাদ ঘোলে কিছুটা মেটাতে পেরেছেন। কিন্তু যাদের ঢাকায় কাছের তেমন কোন আত্মীয়-স্বজন নেই তাদের অবস্থা খুবই করুণ ছিল। অন্যদিকে যারা ঢাকায় থেকে ঈদ করাতেই ব্যাস্ত তাদের কথা আমরা আর নাই বলি কেননা তাদের ঈদ সবসময়ই বিস্বাদ ও সাদা-কালো, তারা কখনই সবাই মিলে আনন্দ ভাগ করে নেবার অনুভুতি পায় না। এখন আমরা ঈদের প্রস্তুতি এর দিকে আসি। লকডাউনের কারনে কোনো দোকান-পাট অথবা শপিং কমপ্লেক্স খোলা ছিল না। তাই আমরা ঈদের জন্যে নতুন কোন পোশাক কিনতে পারিনি। তাই অনেকেই হয়তো ঈদের দিন নতুন পোশাক পরতে পারিনি, তবে যাদের কাছে আগে থেকেই নতুন পোশাক কেনা ছিল তারা নতুন পোশাক পরতে পেরেছে। তাছারা যারা অনলাইনে জামাকাপড় কিনেছে তারাও নতুন পোশাক পরতে পেরেছে। তবে এটি খুব একটা বড় সমস্যা নয়। প্রতি বছরই আমাদের দেশে ইফতার বাজার বসে, সেইখান থেকে আমাদের মধ্যে অনেকেই নানা ধরণের বাহারি ইফতার কিনে থাকি। তবে এবার কঠোর লকডাউনের কারনে বেশিরভাগ দোকানপাট বন্ধ ছিল, যার ফলশ্রুতিতে আমাদের ইফতার এর মেন্যুতে তেমন কোন লোভনীয় ও বাহারী খাবার ছিল না। তবে আমাদের যাদের মায়েরা একটু অবসরে ছিল তাদের মধ্যে অনেকেই নানা ধরণের নতুন খাবার তৈরি করেছিল। এবার আমাদের অনেকেই ঈদের জামাতে অংশগ্রহণ করতে পারিনি। তাই হয়তো অনেকেই সকাল ১১ টায় অথবা ১২ টায়, কেননা আমাদের কোন কাজ নেই এবং যদি ঈদের জামাতে যাওয়ার কথা থাকলে হয়ত আগে ঘুম থেকে উঠতাম। তারপর এই কয়দিন রোজা রাখার জন্যে সকালে খুব একটা খিদে পায় না, তাই আমাদের অনেকেই সকালে তেমন একটা কিছু খাইনি। ঈদের দিনে আমরা নানা জায়গায় বেড়াতে যাই, তবে এবার সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্যে আমরা কেউই কোন স্থানে ঘুরতে যেতে পারিনি। তাই আমদের বাসায় থেকেই ঈদ উদযাপন করতে হয়েছে। অনেকের বাসাতে হয়তো কাজের বুয়া না থাকার কারনে খুব একটা বিশেষ খাবার রান্না হয়নি আবার অনেকেই হয়তো নিজ উদ্যোগে নতুন কোন খাবার রান্না করেছেন। এইসব কাজ করতে করতে এবং দুপুরের খাবার খেতে খেতে হয়ত বিকেল হয়ে গেছে। তারপর আমরা আমাদের যারযার মোবাইল নিয়ে বসে পরলাম আর ইন্টারনেটের জগতে দুবে গেলাম। আবার কারো বাসায় যদি ভাইবন ও কাজিনরা থাকে তাহলে তো ভালোই হলো যে একটু তাদের সাথে গল্প করা যায়। তাছারা যদি কারো বাসার কাছে কোন আত্মীয়ের বাসা থাকে তাহলে হয়তো তারা আমাদের বাসায় এলো, না হয় আমরা তাদের বাসায় গেলাম। শেষে রাত হয়ে গেলো আর ঈদের দিন শেষ! ঈদের অনন্য দিনগুলিও আমাদের এভাবেই কাটল। এতক্ষণ তো আমরা যারা ঢাকায় ছিল তাদের কথা বললাম, এখন আমরা ঢাকার বাহিরের মানুষদের কথা বলব। ঢাকার বাহিরে যারা তাদের পরিবার পরিজনের কাছে ছিল তাদেরতো ভালোই আনন্দ হয়েছিল কিন্তু যারা তদের আত্মীয়দের থেকে দুরে ছিল তাদের অবস্থা খুব একটা ভালো ছিল না। তাদের অবস্থাও ঢাকার বাসিন্দাদের মত ছিল। আবার যারা দূরবর্তী স্থানে ছিল তাদের অনেকেই ইন্টারনেটের সুবিধা উপভোগ করতে পারেনি, তাই তারা অনলাইনে কেনাকাটা করার সুযোগ ও পাইনি, তাই তাদের অবস্থাও খুব একটা ভালো ছিল না। সবশেষে বলা যায় যে এই ঈদটা খুব একটা আনন্দময় না হলেও একটু ব্যাতিক্রমধর্মী ছিল, আর আমরা একটি নতুন অভিজ্ঞতার সাক্ষী হতে পেরেছি।
![](https://static.wixstatic.com/media/0a26bb_8b93bdfa73d04dce86f112a0fa2fa9c0~mv2.jpg/v1/fill/w_980,h_649,al_c,q_85,usm_0.66_1.00_0.01,enc_auto/0a26bb_8b93bdfa73d04dce86f112a0fa2fa9c0~mv2.jpg)
Kommentare